Friday, February 12, 2016

সুরের প্রভাব দেহ মনে


আমাদের শরীরের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে সুরের একটা দারুন সম্পর্ক রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে সুরের মূর্চ্ছনার সঙ্গে হৃদস্পন্দনের হার প্রভাবিত হয়। আপনি যদি হাইমেটাল গান শুনেন তবে আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে। সাধারণত কনসার্টে দেখা যায় কিছু গান শোনার পরপরই তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। আবার রবীন্দ্রসংগীত শুনলে অনেকের ঘুম চলে আসে। অর্থ্যাৎ শুরের ছন্দ ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহমনে এর প্রভাব পড়ে।


তাইওয়ানের হ্যাওসিউন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির কলেজ অব নার্সিং এক গবেষণার ফলে জানিয়েছে, সফট মিউজিক শুনলে হৃদস্পন্দন কমে যায়।দম ধীর হয়। রক্তচাপ কমে যায়। আর তখন শরীর সহজেই শিথিল হয়। স্ট্রেস কমে যায়। মানসিক শান্তি চলে আসে। উচ্চরক্তচাপ ও মানসিক স্ট্রেস রয়েছে এমন রোগীদের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে কিছুদিন সফট মিউজিক শোনার পর তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এতে গবেষকরা প্রমাণ করলেন সুর দেহ মনকে শিথিল করে। ক্লান্তির বিনাশ করে। আর তখন প্রশান্ত মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ ও নির্ভুল হয়। এ তখ্য প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকি সুপার কনসাশনেস ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনে বলা হয় কিছু সুরের প্রভাবে  প্রাকৃতিক দৃশ্য-কল্পে হারিয়ে যান  অনেকেই। মন তখন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ব হয়ে যায়। 

বজ্রপ্রাণ চর্চার আপনি যা লাভ করবেন

বজ্রপ্রাণ চর্চার মনোদৈহিক উপকারিতা অনেক। আত্মবিশ্বাসের সাথে যে কোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে বজ্রপ্রাণ অনন্য। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে চর্চাকারী লাভ করেন--

১. অফুরন্ত প্রাণশক্তি:
২. শারিরীক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য
৩. সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্ন্তদৃষ্টি লাভ।
৪. কোনো কিছু করার আগে তা মনের চোখে গভীরভাবে অবলোকন।
৫. কাজ করে ক্লান্ত হবেন না।
৬. মানসিক প্রশান্তি
৭. স্ট্রেস থেকে মুক্তি

৮. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।

হাটতে হাটতে প্রাণায়াম:

দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই শরীর চর্চা করেন না। একসময় কাজ এগিয়ে যায়। ব্যক্তি পিছিয়ে পড়ে। নানারকম রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে আনন্দময় জীবনের ছন্দপতন শুরু হয়। আর তখন উপার্জিত অর্থের একটা বড় অংশ খরচ হয়ে যায় চিকিৎসার পেছনে। যারা ব্যস্ততার কারণে ব্যায়াম করতে পারেন না তাদের জন্য সহজ ও কার্যকর প্রক্রিয়া হচ্ছে ভ্রমণ প্রাণায়াম। প্রতিদিনের স্বাভাবিক হাঁটাচলার মধ্যেই এটি করা যায়। এজন্য বিশেষ সময় বের করা কিংবা আলাদা পোশাকের প্রয়োজন হয় না। অফিসে যাওয়ার সময় কিংবা ফেরার পথে হাঁটার সময় এটি চর্চা করা যেতে পারে। হাঁটার সময় আমরা একটি নিয়ম অনুসরণ করবো। এটি হচ্ছে ৪:৪:৮।

কীভাবে করবেন?
হাঁটার সময় চার কদমে দম নিন। পরবর্তী চার কদম দম ধরে রাখুন। পরবর্তী আট কদমে দম ছাড়ুন। এ প্রক্রিয়াকে সহজে মনে রাখার উপায় হচ্ছে ৪:৪:৮। নিয়মিত চর্চা করার মাধ্যমে এ ধাপ বাড়ানো সম্ভব। প্রাথমিকভাবে চর্চা করতে গেলে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়তে পারে। তবে প্রথমদিকে একসঙ্গে বেশি সময় চর্চা না করে নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য চর্চা করলে একসময় দৈনন্দিন হাঁটাচলায় তা অভ্যাসে পরিণত হবে।

আমরা সচরাচর যেভাবে দম নিই দম ছাড়ি তাতে পুরো শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। উচ্চরক্তচাপ, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, রক্তদুষ্টির বিভিন্ন কারণের একটি হচ্ছে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও অক্সিজেনের অভাব। আমরা যেভাবে দম নিই দম ছাড়ি এতে অনেকের শরীরের প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয় না। দম ধরে রাখার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন শোষণ করার সুযোগ পায়। এতে মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাড়ে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ সম্ভব হয়।  

সমান্তরাল প্রবাহ:



প্রকৃতির দিকে তাকালে আমরা দেখি দুটি ডানায় ওপর ভর করেই পাখি আকাশে ওড়ে। একটি ডানা যদি ভেঙে যায় পাখি কি আকাশে আগের মতো উড়তে পারবে?---পারবে না। আমাদের দেহ ও মনের অবস্থা ঠিক এই রকম। শারিরীক ও মানসিকভাবে একজন সুস্থ মানুষ মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়তে পারেন। নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্ভাবনার দ্বারে পৌঁছাতে পারেন। মন ও দেহের সমান্তরাল অবস্থার মাধ্যমে ধাপে ধাপে সাফল্যের পথে অবগাহন করা যায়। বজ্রপ্রাণ শরীর ও মনের সমান্তরাল প্রবাহ সৃষ্টি করে। 


কামার ও বডি বিল্ডারের গল্প


বডি বিল্ডার তার পেশীশক্তির বাড়ানোর জন্য নিয়মিত যে চর্চা করেন কামারও দৈনন্দিন কাজের মধ্যে তাই করেন।এদিক থেকে কামার ও বডিবিল্ডারের দৈনন্দিন কার্যক্রমে খুব একটা পার্থক্য নেই। বডি বিল্ডার তার পেশী গঠনের জন্য প্রতিদিন কিছুসময় নিয়মিত ড্যাম্বেল দিয়ে পেশীর ব্যায়াম করেন।
যাতে পেশীর গঠন সুন্দর ও শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে কামারও সারাদিন ভারী হাতুড়ি নিয়ে কাজ করেন। কামারের লক্ষ্য থাকে হাতুড়ি দিয়ে লোহাকে কীভাবে নির্দিষ্ট কাঠামোয় রূপান্তর করা সেদিকে। অন্যদিকে বডি বিল্ডারের লক্ষ্য হচ্ছে কীভাবে পেশীর গঠন সুন্দর করা যা

য় ও পেশীশক্তি বাড়ানো যায় সেদিকে। এতে দেখা যায় নিয়মিত একই পরিমান ভারোত্তলনের মাধ্যমে একজন বডিবিল্ডার আকর্ষণীঁয় দেহ ও পেশীশক্তির অধিকারী হন। অন্যদিকে একই ধরনের পরিশ্রম করা সত্ত্বেও কামারের শারিরীক কাঠামোর খুব একটা পরিবর্তন হয় না।

এখানে মূল বিষয় হচ্ছে ফোকাস বা অবলোকন। বডি বিল্ডার ড্যাম্বাল নিয়ে উঠানামার সময় ভাবেন তার পেশী সুন্দর হচ্ছে। আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। অনুশীলনের পাশাপাশি মনছবি দেখেন তার সুঠাম দেহ ও  পেশীর। ফলে একসময় তিনি আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী হন। অন্যদিকে কামারের ফোকাস বা অবলোকন হচ্ছে সুন্দর লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করা। তিনি শুধু তাই তৈরি করেন। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে অবলোকন। আমাদের মন বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। মন থেকে মানুষ যখন যা চায় যুক্তিসঙ্গত প্রতিটি চাওয়ার সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে তার একাত্বতা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য, সাফল্য ও প্রাচুর্য তার দিকে আকৃষ্ট হয়। 

বজ্রপ্রাণের অষ্টমূল


বজ্রপ্রাণের মূল ভিত্তি আটটি। এর কোনো একটির অনুপস্থিতিতে বজ্রপ্রাণ পরিপূর্ণ হয় না। আর যখন একজন চর্চাকারী মৌলিক এ বিষয়গুলো অনুসরণ করে চর্চা করেন তবে তিনি এ থেকে পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে পারেন।


১. Setting Well-being Intention / দেহ ও মনের উন্নয়নের জন্য উদ্দেশ্য স্থির করা
২. Breath In / দম নেওয়া 
৩. Breath Hold / দম ধরে রাখা
৪. Breath Out / দম ছাড়ার প্রক্রিয়া
৫. Muscle Contraction / পেশী সংকোচন
৬. Mind & Muscle Relaxation / মন  ও পেশী শিথিলকরণ
৭. Visualization / দর্পন 
৮. Mindfulness / মনো:সংযোগ


বজ্রপ্রাণে দ্বিগুণ লাভ

আমাদের শরীরে ৬০০ মাংসপেশী রয়েছে। বিভিন্ন রকম এক্সারসাইজের মাধ্যমে মাত্র ২০০ মাংসপেশীর ব্যায়াম হয়। বজ্রপ্রাণ চর্চার মাধ্যমে দ্বিগুণ মাংসপেশী সঙ্গে সংযোগ হয়। এর সঙ্গে রয়েছে দেহমনের সংযোগ। এতে চর্চাকারীর লাভও হয় দ্বিগুণ। কীভাবে দ্বিগুণ লাভ তা জানা যাবে কামার ও বডিবিল্ডারের গল্পের মাধ্যমে।

নানারকম শারিরীক ব্যায়ামে শরীরের বাইরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের খুব একটা ব্যায়াম হয় না। ডিপ ডায়াফ্রামিক ব্রিদিং এক্সসারসাইজ, বেলিব্রিদিং এক্সারসাইজ ও চলন বজ্রপ্রাণ চর্চার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সবমিলিয়ে ৪০০ মাংসপেশী সক্রিয়ভাবে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রভাব ফেলে। এ কারণে বজ্রপ্রাণে দ্বিগুণ লাভ। 

বেলি ব্রিদিং:


অধিকাংশ ব্যায়াম শরীরের বাইরের অঙ্গের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত। শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ভালো রাখার জন্য রয়েছে বেশ কিছু ব্যায়াম। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বেলি ব্রিদিং। বেলি ব্রিদিং প্রক্রিয়ায় আপনি দম নেবেন পেটে। দম নেওয়ার সময় ভাবুন পেটে দম যাচ্ছে। আর তাতে পেট উপরের দিকে ফুলে উঠছে। বুকের ভেতরকার ডায়াফ্রাম নিচের দিক থেকে উপরের দিকে সংকুচিত হচ্ছে।

বেলি ব্রিদিংয়ের মাধ্যমে শরীর সহজেই শিথিল হয়। বুক, পেট, বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র, কিডনি ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মেসেজ হয়। সোজা হয়ে বসে কিংবা শুয়েও এটি চর্চা করা যায়। ঘুমাতে গেলে যারা বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই সময় কাটিয়ে দেন তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। কিছুক্ষণ চর্চা করলে ঘুম এমনিতেই চলে আসবে। 

ডিপ ব্রিদিং ইফেক্ট:



গভীর দম চর্চার উপকারিতা অনেক। আমরা স্বাভাবিক নি:শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণত ফুসফুসের ২০ভাগ ব্যবহার করি। অনেকে করি তার চেয়েও কম। এতে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বিঘ্ন হয়। আর তাতেই আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে হাঁপিয়ে উঠি।

নামকরণ


বজ্রপ্রাণের নামকরণ করা হয়েছে এর যুগোপযোগী ব্যবহার ও দর্শনগত পার্থক্যের কারণে। অন্যান্য ব্যায়ামের সঙ্গে বজ্রপ্রাণের পার্থক্য হচ্ছে এটি পুরো শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। দুই ধরনের বজ্রপ্রাণ চর্চা করা হয়। স্থির ও চলন বজ্রপ্রাণ। 

Wednesday, January 27, 2016

বজ্রপ্রাণ



বজ্র শব্দের অর্থ হীরক। প্রাণ মানেই জীবন প্রবাহ। দেহমনের প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মশক্তি বৃদ্ধিতে বজ্রপ্রাণ অনন্য। বজ্রপ্রাণ চর্চার মাধ্যমে দেহমনের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে মানসিক স্থিরতা ও শারিরীক সুস্থতার মাধ্যমে এগিয়ে চলা হয় সহজ, প্রাণপ্রবাহে আসে সতেজতার অনুভূতি। যে কোনো বয়সে বজ্রপ্রাণ চর্চা করা যায়। বজ্রপ্রাণ চর্চার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে নারী পুরুষ যে কেউ বজ্রপ্রাণ চর্চা করতে পারেন।এজন্য বিশেষ স্থান কিংবা পোশাকেরও প্রয়োজন হয় না।